সেহরি
ও ইফতারিতে কি কি খাবার
বর্জন করা উচিত ?
সেহরি
ও ইফতারিতে যা যা বর্জন করা উচিত:
সেহরি:
সেহরি
রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রোজার দিন ভোরের আগে খাওয়া এই খাবারটি দীর্ঘ
দিন ধরে রোজা রাখার জন্য শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহ করে। সেহরি শুধুমাত্র খাবার খাওয়ার চেয়েও বেশি; এটি একটি আধ্যাত্মিক অনুশীলন যা মুসলমানদের আল্লাহর
প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ করতে সাহায্য করে।
সেহরির
গুরুত্ব:
- রমজান মাসে রোজা রাখার জন্য সেহরি অপরিহার্য।
- সেহরি শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহ করে যা দীর্ঘ সময় ধরে রোজা রাখতে সাহায্য করে।
- সেহরি ক্ষুধা, দুর্বলতা এবং थकान রোধে সাহায্য করে।
- সেহরি মনোযোগ ও एकाग्रতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- সেহরি আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত করতে সাহায্য করে।
সেহরির
সময়:
- সেহরির সময় সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত।
-
সেহরিতে
কী খাবেন:
- সেহরিতে হালকা ও সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়া উচিত।
- খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফাইবার থাকা উচিত।
- সেহরিতে খেজুর, রুটি, ডিম, দুধ, ফল, শাকসবজি, ওটমিল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
- সেহরিতে অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত, ভাজা-পোড়া, মিষ্টি এবং ক্যাফেইনযুক্ত খাবার বর্জন করা উচিত।
সেহরির
কিছু টিপস:
- রাতের বেলায় যথেষ্ট ঘুমানোর চেষ্টা করুন যাতে সেহরির জন্য সহজে ঘুম থেকে উঠতে পারেন।
- সেহরি খাওয়ার পরপরই ঘুমাতে যাবেন না।
- সেহরির সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
- সেহরির পরপরই রোজার নিয়ত করুন।
সেহরি
সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা:
- ভুল ধারণা: সেহরি খাওয়া ওয়াজিব।
- সঠিক ধারণা: সেহরি খাওয়া সুন্নাহ।
- ভুল ধারণা: সেহরিতে অতিরিক্ত খেলে রোজা ভেঙে যাবে।
- সঠিক ধারণা: সেহরিতে অতিরিক্ত খাওয়া রোজা ভাঙে না, তবে এটি পেট খারাপ, অম্বল, বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- ভুল ধারণা: সেহরিতে ভারী খাবার খেলে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষুধা অনুভূত হবে না।
- সঠিক ধারণা: সেহরিতে হালকা ও সহজে হজম হয় এমন খাবার খেলে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষুধা অনুভূত না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সেহেরির
খাবারঃ
- অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার: তেল-মসলাযুক্ত খাবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং পানিশূন্যতাও বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত
তেল-মসলাযুক্ত খাবার
আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এসকল খাবার নিয়মিত খেলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য
সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবারের
ক্ষতি:
- হজমে সমস্যা: তেল-মসলাযুক্ত খাবার হজমে
সমস্যা তৈরি করতে পারে। এতে পেট খারাপ, অম্বল, বমি বমি ভাব, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি
সমস্যা হতে পারে।
- স্থূলতা: তেল-মসলাযুক্ত খাবারে ক্যালোরির
পরিমাণ বেশি থাকে। নিয়মিত এসকল খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং স্থূলতা
দেখা দিতে পারে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি: তেল-মসলাযুক্ত খাবারে অসম্পৃক্ত
ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি: তেল-মসলাযুক্ত খাবার নিয়মিত
খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- রক্তচাপ বৃদ্ধি: তেল-মসলাযুক্ত খাবার রক্তচাপ
বৃদ্ধি করতে পারে।
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: তেল-মসলাযুক্ত খাবার ডায়াবেটিসের
ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার
বর্জন করার টিপস:
- রান্নার সময় তেলের পরিমাণ কমিয়ে
দিন।
- ভাজা-পোড়া খাবার পরিহার করুন।
- মসলার পরিমাণ কমিয়ে দিন।
- সবজি ও ফল বেশি খান।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
- উপসংহার:
- আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অতিরিক্ত
তেল-মসলাযুক্ত খাবার বর্জন করা উচিত। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া আমাদের
সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।
- ভাজা-পোড়া খাবার: ভাজা-পোড়া খাবারে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে এবং এতে কোন পুষ্টিগুণ থাকে না।
- মিষ্টি খাবার: মিষ্টি খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয় এবং ক্ষুধামান্দ্য তৈরি করে।
মিষ্টি
খাবার আমাদের সকলেরই প্রিয়। তবে, অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
মিষ্টি
খাবারের ক্ষতি:
- স্থূলতা: মিষ্টি খাবারে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে। নিয়মিত এসকল খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং স্থূলতা দেখা দিতে পারে।
- ডায়াবেটিস: মিষ্টি খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত মিষ্টি খাবার খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- হৃদরোগের ঝুঁকি: মিষ্টি খাবারে অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- দাঁতের ক্ষয়: মিষ্টি খাবার দাঁতের ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- পুষ্টির অভাব: মিষ্টি খাবারে পুষ্টিগুণের পরিমাণ কম থাকে। নিয়মিত মিষ্টি খাবার খেলে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে।
মিষ্টি
খাবার খাওয়ার টিপস:
- মিষ্টি খাবার পরিমিত পরিমাণে খান।
- খাবারের পর মিষ্টি খাবার খান।
- মিষ্টি খাবার খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করুন।
- পুষ্টিকর খাবার বেশি খান।
উপসংহার:
আমাদের
স্বাস্থ্যের জন্য অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার বর্জন করা উচিত। পরিমিত পরিমাণে মিষ্টি খাবার খাওয়া এবং পুষ্টিকর খাবার বেশি খাওয়া আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।
- ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়, যেমন চা, কফি, কোলা ইত্যাদি, পানিশূন্যতা বাড়াতে পারে।
- ঠান্ডা পানীয়: ঠান্ডা পানীয় হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ইফতার:
- অতিরিক্ত খাওয়া: দীর্ঘ সময় না খাওয়ার পর ইফতারিতে অনেকেই অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। এতে পেট খারাপ, অম্বল, বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
- ভাজা-পোড়া খাবার: ভাজা-পোড়া খাবার সেহরির মতো ইফতারের জন্যও ক্ষতিকর।
- মিষ্টি খাবার: ইফতারের পরপরই মিষ্টি খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- শীতল পানীয়: ইফতারের পরপরই শীতল পানীয় পান করলে পেট খারাপ হতে পারে। শীতল
পানীয় গরমের
সময় পানিশূন্যতা দূর করতে এবং রিফ্রেশমেন্টের জন্য জনপ্রিয়। তবে, অতিরিক্ত শীতল
পানীয় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- শীতল পানীয়ের ক্ষতি:
- দাঁতের ক্ষয়: শীতল পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে
চিনি থাকে, যা দাঁতের ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- পেট খারাপ: শীতল পানীয় পেট খারাপ,
অম্বল, বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি: শীতল পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে
ক্যালোরি থাকে, যা ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- পুষ্টির অভাব: শীতল পানীয়তে পুষ্টিগুণের
পরিমাণ কম থাকে। নিয়মিত শীতল পানীয় পান করলে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে।
- অন্যান্য সমস্যা: শীতল পানীয় ডায়াবেটিস,
হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- শীতল পানীয়ের বিকল্প:
- পানি: পানি পানিশূন্যতা দূর করার
জন্য সবচেয়ে ভালো পানীয়।
- ফলের রস: তাজা ফলের রস শীতল পানীয়ের
একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প।
- শরবত: ঘরে তৈরি শরবত শীতল পানীয়ের
একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প।
- লাচ্ছি: লাচ্ছি শীতল পানীয়ের একটি
স্বাস্থ্যকর বিকল্প।
- উপসংহার:
- আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অতিরিক্ত
শীতল পানীয় বর্জন করা উচিত। পানি, ফলের রস, শরবত, লাচ্ছি ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর
বিকল্প পানীয় পান করা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।
-
- কার্বোনেটেড পানীয়: কার্বোনেটেড পানীয় পেট ফাঁপা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
সেহরি
ও ইফতারিতে যা যা খাওয়া উচিত:
- সেহরিতে: হালকা ও সহজে হজম হয় এমন খাবার, যেমন খিচুড়ি, ডিম, রুটি, দুধ, ফল ইত্যাদি।
- ইফতারে: খেজুর, ফল, শরবত, স্যুপ, ডিম, রুটি, সবজি ইত্যাদি।
কিছু
টিপস:
- সেহরি ও ইফতারিতে পানিশূন্যতা রোধ করার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
- খাবার ধীরে ধীরে ও ভালোভাবে চিবিয়ে খান।
- অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
উপসংহার:
সেহরি
ও ইফতারিতে সঠিক খাবার খাওয়া রমজান মাসকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকরভাবে কাটানোর জন্য
গুরুত্বপূর্ণ। উপরে উল্লেখিত খাবারগুলি বর্জন করে ও স্বাস্থ্যকর খাবার
খেয়ে আপনি রমজান মাসের পূর্ণ ফায়দা পেতে পারেন।
marriage media